অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম এবং বেশি লাভ হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলি চাষ
করে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা। এজন্য দিন দিন এ জেলায় ব্রোকলি চাষের
দিকে অনেক কৃষক ঝুঁকছেন। কৃষকদের আগ্রহ দেখে ব্রোকলির উৎপাদন সম্প্রসারণে
কৃষি বিভাগ এরই মধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
ক্যানসার প্রতিরোধী এই সবজি উন্নত বিশ্বে জনপ্রিয় হলেও দেশে এখন পর্যন্ত
খুব একটা জনপ্রিয় নয়। ধীরে হলেও খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে সবজিটি।
প্রথমদিকে এই সবজি চাষে কৃষকরা তেমন আগ্রহী না থাকলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগের
উদ্যোগে গত দু’বছর পরীক্ষামূলকভাবে চাষের পর মিলেছে সাফল্য। এ বছর
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে ৩ হেক্টর জমিতে ব্রোকলির চাষ করা হয়।
আর কৃষি বিভাগের সহায়তায় এই সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রয়োজনীয়
সহায়তার দিয়েছেন শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার আমিনুজ্জামান ও উপ-সহকারী কৃষি
কর্মকর্তা গোলাম আজম কনক।
শ্যামপুরের ব্রোকলি চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রোকলির বাজার নিয়ে
প্রথমদিকে সন্দেহ ছিল। আমি এক বিঘা জমিতে এ সবজি চাষ করেছি। একবিঘা জমিতে
আমি ৪ হাজার ব্রোকলির চারা লাগিয়েছিলাম। চাহিদা বাড়ায় এবং ভালো দাম পাওয়ায়
আগামীতে চাষের পরিমাণ বাড়াবো।’
কামরুজ্জামান নামে আরেক চাষি বলেন, ‘৯০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। রোগ
বালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় এটি অনেকটাই কীটনাশকমুক্ত। বিঘা প্রতি
উৎপাদন খরচ ১০-১৫ হাজার টাকা। যা বিক্রি করে আয় হয় ৩৫-৪০ হাজার টাকা।’
স্ট্রবেরি,বিভিন্ন জাতের কুল ও পেয়ারা চাষ করে সফলতা পাওয়ার পর এবার ৩
বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলির চাষ করেছেন কৃষক নজিবুর রহমান। তিনি
পেশায় একজন শিক্ষিত কৃষক। তিনি বলেন, প্রথমে ব্রোকলি চাষ
করে তিনি কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাননি। তারপরও হাল ছাড়েননি। এসময় পাশে এসে দাঁড়ান
উপজেলা কৃষি বিভাগ। এরপরেই আসে সফলতা। তা দেখে উদ্বুদ্ধ হয় স্থানীয়
কৃষকরা। লাভজনক এই সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা। এরপর থেকেই এখানে
বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলির বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের মাঝে সম্ভাবনাময় এবং নতুন সবজি
হিসেবে সাড়া ফেলেছে ব্রোকলি। অনেক কৃষকই এই সবজি চাষের জন্য আমার কাছে
আসছেন পরামর্শ নিতে। ভোক্তা পর্যায়ে এর চাহিদা যেমন বেড়েছে এবং কৃষকরা
যেভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তাতে আগামীতে এ সবজি চাষে বিপ্লব ঘটবে। ফিরবে
কৃষকের ভাগ্যও। স্বল্প সময়ে ও অল্প খরচে একবিঘা জমিতে ব্রোকলি থেকে খরচ
বাদ দিয়ে উপার্জন হচ্ছে ২৫-৩০ হাজার টাকা।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া ব্রোকলি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায়,
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগাম-২
(এনএটিপি-২) এর আওতায় স্থানীয় কৃষি বিভাগ এই ফসল উৎপাদন ও প্রদশর্নীর
উদ্যোগ নেয়।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম আমিনুজ্জামান বলেন, কৃষকদের এই সবজি
চাষে উদ্ধুদ্ধকরণসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে।
আর নতুন সবজি হিসেবে এর বাজারজাতকরণেও নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হুদা বলেন,
‘এ সবজি চাষ একদিকে চাষিদের জন্য যেমন ইতিবাচক, তেমনি পুষ্টির চাহিদা
পূরণেও সহায়ক। আমাদের প্রত্যাশা আগামীতে এ সবজির চাষ যেমন বাড়বে তেমনি এই
সবজির চাষ সম্প্রসারণই এখন আমাদের কার্যক্রম।’
উত্তর সমূহ