হাইড্রোফনিক হলো মাটি ছাড়া ফসল উৎপাদনের একটি পদ্ধতি। প্লাস্টিকের বালতি,
পানির বোতল, মাটির পাতিল ইত্যাদি ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে ছাদ, বারান্দা
এবং খোলা জায়গায় ফসল উৎপাদন করা যায়। পাত্রের মধ্যে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য
উপাদানগুলো যথোপযুক্ত মাত্রায় দিয়ে ফসল উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতির
চাষাবাদে অব্যবহৃত জায়গায় যেমন ফসল উৎপাদন সম্ভব তেমনি কম জমিতে অধিক ফসল
উৎপাদনও সম্ভব। একই জায়গায় মাচা বানিয়ে বিভিন্ন স্তরে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ
করা যায়। একখ- জমিতে সনাতন পদ্ধতিতে ফল, ফুল, সবজি আবাদ করে যে ফলন পাওয়া
যায় হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে তার চেয়ে অন্তত ৯ গুণ ফলন পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে
মাটির ব্যবহার যেমন নেই, তেমনি পানির প্রয়োজনও হয় অত্যন্ত কম। উৎপাদনের
পরিমাণ ও উৎপাদিত ফসলের মান মাটিতে উৎপাদিত ফসলের চেয়ে ন্যূন নয়, ক্ষেত্রে
বিশেষে বরং বেশি।হাইড্রোপনিক পদ্ধতির সুবিধা
ক) এ পদ্ধতিতে আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না বিধায় সারা বছর কিংবা অমৌসুমেও চাষাবাদ করা যায়।
খ) পদ্ধতিটি মাটি বিহীন চাষ পদ্ধতি হওয়ায় মাটি বাহিত রোগ ও কৃমিজনিত রোগ হয় না।
গ) কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হওয়ায় কারণে এই পদ্ধতিতে কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।
ঘ) এই পদ্ধতিতে ছোট এবং বড় পরিসরে স্বাস্থ্য সম্মত এবং পরিচ্ছন্নভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়।
ঙ) এটি হোম-ফার্মিং এর জন্য একটি আদর্শ প্রযুক্তি বিধায় অধিক লাভজনক, অর্থকরী ও মান সম্পন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।সাধারণত দুটি উপায়ে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয় :
১। সঞ্চালন পদ্ধতি (Circulating System)
এ পদ্ধতিতে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদানসমূহ যথাযথ মাত্রায় মিশ্রিত করে
একটি ট্যাংকিতে নেওয়া হয় এবং পাম্পের সাহায্যে পাইপের মাধ্যমে ট্রেতে
পুষ্টি দ্রবণ (Nutrient Solution) সঞ্চালন করে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন
অন্ততপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা পাম্পের সাহায্যে এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালু
রাখা দরকার। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে প্রথম বছর ট্রে, পাম্প এবং পাইপের
আনুসাঙ্গিক খরচ একটু বেশি হলেও পরবর্তী বছর থেকে শুধু রাসায়নিক খাদ্য
উপাদানের খরচ প্রয়োজন হয়। ফলে দ্বিতীয় বছর থেকে খরচ অনেকাংশে কমে যাবে।২। সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি (Non-Circulating System)
এই পদ্ধতিতে একটি ট্রেতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহ পরিমিত মাত্রায়
সরবরাহ করে সরাসরি ফসল উৎপাদন করা হয়। এই পদ্ধতিতে খাদ্য উপাদান সরবরাহের
জন্য কোন পাম্প বা পানি সঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে খাদ্য উপাদান
মিশ্রিত দ্রবণ ও উহার উপর স্থাপিত কর্কশীটের মাঝে ৫-৭ সেমি পরিমাণ জায়গা
ফাঁকা রাখতে হবে এবং কর্কশীটের উপরে ৪-৫টি ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে
যাতে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে এবং গাছ তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন
কর্কশীটের ফাঁকা জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে পারে। ফসলের প্রকারভেদে সাধারণত
২-৩ বার এই খাদ্য উপাদান ট্রেতে যোগ করতে হয়। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ
সহজেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্লাস্টিক বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল,
ইত্যাদি ব্যবহার করেও বাড়ির ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় সঞ্চালন বিহীন
পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করতে পারে। এত খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হবে।প্রতি বছর বাংলাদেশের জনসংখ্যা, আবাসনের
জন্য ঘর-বাড়ি, যোগাযোগের জন্য রাস্তা এবং কল-কারখানা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি
পাচ্ছে। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে আবাদ যোগ্য জমির পরিমাণ। বর্ধিত জনসংখ্যার
অব্যাহত খাদ্য চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে তাই শুধু আবাদি জমির উপর নির্ভর করা
যাবে না। দেশের এমনি অবস্থায় প্রয়োজন অব্যবহৃত খালি জায়গা ও পতিত স্থান
শস্য চাষের আওতায় আনা। হাইড্রোপনিক চাষ পদ্ধতি এ ক্ষেত্রে সঠিকভাবে
আরোপযোগ্য একটি কৌশল। এ পদ্ধতি বাড়ির ছাদে, আঙ্গিনায়, বারান্দায় কিংবা
চাষের অযোগ্য পতিত জমিতে সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
উত্তর সমূহ
হাইড্রোফনিক হলো মাটি ছাড়া ফসল উৎপাদনের একটি পদ্ধতি। প্লাস্টিকের বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল ইত্যাদি ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় ফসল উৎপাদন করা যায়। পাত্রের মধ্যে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানগুলো যথোপযুক্ত মাত্রায় দিয়ে ফসল উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতির চাষাবাদে অব্যবহৃত জায়গায় যেমন ফসল উৎপাদন সম্ভব তেমনি কম জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনও সম্ভব। একই জায়গায় মাচা বানিয়ে বিভিন্ন স্তরে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। একখ- জমিতে সনাতন পদ্ধতিতে ফল, ফুল, সবজি আবাদ করে যে ফলন পাওয়া যায় হাইড্রোফনিক পদ্ধতিতে তার চেয়ে অন্তত ৯ গুণ ফলন পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে মাটির ব্যবহার যেমন নেই, তেমনি পানির প্রয়োজনও হয় অত্যন্ত কম। উৎপাদনের পরিমাণ ও উৎপাদিত ফসলের মান মাটিতে উৎপাদিত ফসলের চেয়ে ন্যূন নয়, ক্ষেত্রে বিশেষে বরং বেশি।হাইড্রোপনিক পদ্ধতির সুবিধা ক) এ পদ্ধতিতে আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না বিধায় সারা বছর কিংবা অমৌসুমেও চাষাবাদ করা যায়। খ) পদ্ধতিটি মাটি বিহীন চাষ পদ্ধতি হওয়ায় মাটি বাহিত রোগ ও কৃমিজনিত রোগ হয় না। গ) কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হওয়ায় কারণে এই পদ্ধতিতে কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। ঘ) এই পদ্ধতিতে ছোট এবং বড় পরিসরে স্বাস্থ্য সম্মত এবং পরিচ্ছন্নভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়। ঙ) এটি হোম-ফার্মিং এর জন্য একটি আদর্শ প্রযুক্তি বিধায় অধিক লাভজনক, অর্থকরী ও মান সম্পন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।সাধারণত দুটি উপায়ে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয় : ১। সঞ্চালন পদ্ধতি (Circulating System) এ পদ্ধতিতে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদানসমূহ যথাযথ মাত্রায় মিশ্রিত করে একটি ট্যাংকিতে নেওয়া হয় এবং পাম্পের সাহায্যে পাইপের মাধ্যমে ট্রেতে পুষ্টি দ্রবণ (Nutrient Solution) সঞ্চালন করে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা পাম্পের সাহায্যে এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালু রাখা দরকার। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে প্রথম বছর ট্রে, পাম্প এবং পাইপের আনুসাঙ্গিক খরচ একটু বেশি হলেও পরবর্তী বছর থেকে শুধু রাসায়নিক খাদ্য উপাদানের খরচ প্রয়োজন হয়। ফলে দ্বিতীয় বছর থেকে খরচ অনেকাংশে কমে যাবে।২। সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি (Non-Circulating System) এই পদ্ধতিতে একটি ট্রেতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহ পরিমিত মাত্রায় সরবরাহ করে সরাসরি ফসল উৎপাদন করা হয়। এই পদ্ধতিতে খাদ্য উপাদান সরবরাহের জন্য কোন পাম্প বা পানি সঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে খাদ্য উপাদান মিশ্রিত দ্রবণ ও উহার উপর স্থাপিত কর্কশীটের মাঝে ৫-৭ সেমি পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে এবং কর্কশীটের উপরে ৪-৫টি ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে এবং গাছ তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন কর্কশীটের ফাঁকা জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে পারে। ফসলের প্রকারভেদে সাধারণত ২-৩ বার এই খাদ্য উপাদান ট্রেতে যোগ করতে হয়। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সহজেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্লাস্টিক বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল, ইত্যাদি ব্যবহার করেও বাড়ির ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় সঞ্চালন বিহীন পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করতে পারে। এত খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হবে।প্রতি বছর বাংলাদেশের জনসংখ্যা, আবাসনের জন্য ঘর-বাড়ি, যোগাযোগের জন্য রাস্তা এবং কল-কারখানা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে আবাদ যোগ্য জমির পরিমাণ। বর্ধিত জনসংখ্যার অব্যাহত খাদ্য চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে তাই শুধু আবাদি জমির উপর নির্ভর করা যাবে না। দেশের এমনি অবস্থায় প্রয়োজন অব্যবহৃত খালি জায়গা ও পতিত স্থান শস্য চাষের আওতায় আনা। হাইড্রোপনিক চাষ পদ্ধতি এ ক্ষেত্রে সঠিকভাবে আরোপযোগ্য একটি কৌশল। এ পদ্ধতি বাড়ির ছাদে, আঙ্গিনায়, বারান্দায় কিংবা চাষের অযোগ্য পতিত জমিতে সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব।